কমিশনার ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন !

কমিশনার ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন !
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫ ধারা অনুযায়ী কমিশন তিন জন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত হবে। কমিশনারদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। কোন কমিশনার মৃত্যুবরণ বা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে বা অপসারিত হলে রাষ্ট্রপতি উক্ত শূণ্য পদে ১১ ধারা অনুযায়ী ত্রিশ দিনের মধ্যে উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই আইনের বিধান সাপেক্ষে কমিশনার নিয়োগ দান করবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও দুইজন কমিশনার গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করায় তিন জন কমিশনারের পদই বর্তমানে ত্রিশ দিনের অধিক কাল ধরে শূণ্য আছে। কমিশন দুদক আইনের তফসিলে উল্লেখিত অপরাধসমূহের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা করবে। চেয়ারম্যান প্রধান নির্বাহী হিসেবে তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কমিশনারগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন এবং এইরূপ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের নিকট কমিশনারগণের জবাবদিহিতা থাকবে। কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত কমিশনের সভায় গৃহীত হবে। দায়িত্ব পালনের জন্য কমিশনের সভায় নিয়মিত সিদ্ধান্ত গ্রহন ও সুপারিশ প্রণয়ণ করা হবে। গৃহীত সিদ্ধান্ত ও সুপারিশসমূহ বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পরিবীক্ষণ করা হবে। প্রতি তিন মাস পরপর কমিশনের সভায় তা মূল্যায়ন করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদ শূণ্য থাকলে দুদকের কার্যক্রম কিভাবে চলবে? স্বাভাবিক কার্যক্রম অচল বা স্থবির হয়ে যাবে না ?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের লাগাতার পনের বছরের অধিক সময় দুর্নীতি ও লুটপাটের ওপর শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শ্বেতপত্রের খচড়া প্রকাশকালে গত ২ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখ ব্রিফিং এ বলেছেন, বিগত সরকারের সময় দেশকে ’চামচাতন্ত্র’ থেকে ’চোরতন্ত্রে’ পরিণত করা হয়েছিল। আইন সভা, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে চুরির অংশ হয়েছে। রাজনীতিক,ব্যবসায়ী এবং উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা এর সহযোগী ছিলেন। এই চোরতন্ত্রের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ছিলেন আমলারা। আর সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংকিং খাতে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি বড় অংশ পাচার হয়ে গেছে। প্রতি বছর গড়ে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তার পরিমাণ জিডিপির প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। বিদেশে পাচারের পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হয়ে থাকতে পারে। তবে দুর্নীতি ও লুটপাটের কিছু অর্থ দেশেও রয়ে গেছে।
অতীতেও টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ১ নম্বরে ছিল ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন চারদলীয় সরকার টিআইবির করা খচড়ার ওপর ভিত্তি করে দুদক আইন,২০০৪ প্রণয়ন করে একটি ’স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ কমিশন হিসেবে দুদক গঠন করে। কিন্তুু বাস্তবক্ষেত্রে জন্মলগ্ন থেকে দুদকের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে দুদক মোটেও ’স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে নাই।
এই পর্যন্ত দুদকের ছয়জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন বিচারপতি সুলতান হোসেইন খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, মোঃ বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। দুদকের প্রথম চেয়ারম্যান মোটেও সফল হন নাই, কারণ তার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালাই প্রণয়ন করা হয় নাই। দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা,২০০৭ ওয়ান/ইলেভেনের অনির্বাচিত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার ২৯ মার্চ,২০০৭ তারিখ প্রজ্ঞাপনমূলে জারী করেছে। লে, জে, হাসান মশহুদ চৌধুরী চেয়ারম্যান হওয়ার পর দুদক আইনের ১৭ ধারার অধীন দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ডিজিএফআই এর মাধ্যমে দেশের সৎ লোকদের নিয়ে প্রতি উপজেলা, জেলা, মহানগরে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন এবং নিয়মিত কর্মসূচী পালন করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তার আমলে প্রথম আমি কক্সবাজার সদর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও এডভোকেট মোহাম্মদ বাকের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করেছি। পরে আমি কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও অধ্যাপক অজিত দাস সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিন বছর করে তিন মেয়াদের দায়িত্ব পালন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির একটি গর্বের ইতিহাস এখানে উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান বিগত ১২/৮/১৪ইং তারিখ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১.৩০ টা থেকে বেলা ২.০০ টা পর্যন্ত পর পর দুইটা মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সভায় দুদক চেয়ারম্যান মূল্যবান বক্তব্য রাখার পর উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে জেলার কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নেন।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক ২য় পর্বের মত বিনিময় সভা শুরু হয় বেলা সাড়ে বারো ঘটিকার সময়। সভার শুরুতে প্রথম পর্বের সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ রুহুল আমিন ২য় পর্বের সভার সভাপতিত্ব করার জন্য কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেন। উক্ত দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক মত বিনিময় সভায় উদ্ভোধনী ভাষণ দেন প্রধান অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব মোঃ বদিউজ্জামান। জেলা ও উপজেলায় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার পর প্রথম বারের মত দুর্নীতি দমন কমিশনের কোন চেয়ারম্যান কক্সবাজার এসে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সাথে সরাসরি মত বিনিময় সভায় অংশ নিচ্ছেন। তাই রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেষখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধের আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কষ্ট স্বীকার করে সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য দুদক চেয়ারম্যান উপস্থিত সকলকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, জেলা উপজেলার সৎ, ত্যাগী ও দুর্নীতি বিরোধী মানুষদেরই দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সর্ব ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দুর্নীতিবাজরা সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও আর্থিকভাবে যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। সৎ লোকদের পুরস্কৃত করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের মত বয়স্কদের রক্তেই দুর্নীতির জীবানু প্রবেশ করেছে। তাই আমরা নতুন প্রজন্মকে একেবারে দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের নিয়ে দেশব্যাপী সততা সংঘ গঠন করার উদ্যাগ গ্রহন করেছি। সভায় উপস্থিত মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রত্যেক মাদ্রাসায়ও সততা সংঘ গঠন করার পরামর্শ দেন এবং উপস্থিত ঈমাম সমিতির নেতা ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মৌলভী কামাল উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথি বলেন আমাদের দেশে এখনও সাধারণ মানুষ মসজিদের ঈমাম সাহেবদের বিশ্বাস করেন। তাই তিনি ঈমাম সাহেবদের আভ্যন্তরিণ মতবিরোধ ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে জুমার নামাজের খুতবায় অন্তত দুই মিনিট দুর্নীতি বিরোধী কথা অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন। জেলা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অজিত দাসের সঞ্চালনায় প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা বক্তব্য রাখার পর প্রধান অতিথি দুদক চেয়ারম্যান সভার সভাপতিকে বক্তব্য রাখার  নির্দেশ দিলে সভাপতির ভাষণে আমি প্রতিরোধ কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে নিজেদের উপর ন্যস্থ দায়িত্ব সততার সাথে যথাযথভাবে পালন করে নিজেদের সততার পরিচয় আগে দিয়েই অপরকে দুর্নীতি ত্যাগ করে সৎ হওয়ার আবেদন করতে পরামর্শ দিই। যে দেশে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও ঘুষের দালালরা কালো টাকার বিনিময়ে সমাজে ব্যাপক সমাদর কিনে নিতে পারে, সে দেশে প্রতি দিন দুর্নীতিবাজ সৃষ্টি হবেই। যে সমাজে সততা ও গুণী ব্যক্তিদের সমাদর নাই সেই সমাজে গুণী জন্ম নেন না।  ২০ নভেম্বর ২০১৩ সালের দুদক আইনের সংশোধনীতে দন্ডবিধির ৪২০ ধারা দুদকের আইনের তফসিলভুক্ত করাতে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জনগণের, আদালতের ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কি কি অসুবিধা ও জটিলতা হচ্ছে তার প্রতি দুদক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। চায়ের দোকানদার, পানের দোকানদার বা ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীর বা সাধারণ নাগরিকের দশ/বিশ হাজার বা কয়েক লাখ টাকার প্রতারণার, জালিয়াতির মামলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বা থানায় আগে দায়ের করা যেতো। এখন সরাসরি হউক বা সিনিয়ার স্পেশাল জজের আদেশে হউক সবগুলি ঠকবাজী, জালিয়াতির মামলা তদন্তের ব্যবস্থা করবে দুদক। সাধারণ মানুষের ছোটখাট ঠকবাজি, প্রতারণা বা জালিয়াতির সারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মামলা তদন্ত করার জন্য যথেষ্ট লোকবল কি দুর্নীতি দমন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে? দুদক কর্মকর্তারা শত শত কোটি টাকা জালিয়াতি, প্রতারণা সংক্রান্ত হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক বীমা বা পাবলিক মানি আত্মসাৎ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে নাকি কয়েক হাজার টাকার সাধারণ মানুষের মামলাগুলি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে? দুদক আইন সংশোধনের নামে এ কোন ষড়যন্ত্র? শুধু ’পাবলিক সার্ভেন্ট’ ও ’পাবলিক মানি’ সংশ্লিষ্ট থাকলেই দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭এ ইত্যাদি ধারার অপরাধ দুদক আইনের আওতায় আসবে এবং সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত লেনদেন সংক্রান্ত হলে তা আগের মত প্রচলিত আইনে তদন্ত ও বিচার হবে মর্মে সংশোধনী আনার পক্ষে প্রস্তাব প্রদান করি। সকলের বক্তব্য শ্রবণ করে দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান জানান, সম্প্রতি দন্ডবিধির ৪২০ ধারা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত করা নিয়ে সৃষ্ট অপ্রত্যাশিত অসুবিধা দুর করার জন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য সরকারের সাথে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের প্রস্তাব একজন দুদক অফিসারকে দিয়ে লিখে নিলেন। দুদক চেয়ারম্যান আমাদের কক্সবাজারে দেওয়া প্রস্তাব কমিশনে পাশ করিয়ে সরকারকে দিলে তা সংসদে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইন হওয়ায় দুদক আইনে বর্তমানের তপসিলে ২১ জুন ২০১৬ ইং তারিখ সংযোজন করা হয়। এই কথা মহান হৃদয়ের অধিকারী সাবেক সফল দুদক চেয়ারম্যান মোঃ বদিউজ্জামান আমাদের না জানালে আমরা নিজেদের দেওয়া প্রস্তাব, আমরা আইন প্রণেতা না হওয়া সত্ত্বেও, আইন হিসেবে সংসদে পাশ হয়ে আইনে রূপান্তর হয়ে বর্তমানে দুদক আইনের তপসিলে আছে তা জানতে পারতাম না।
অভিযোগ আছে, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ও মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর আমলেই দুদক আওয়ামীকরণ হয়ে দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে বড় দুর্নীতিবাজদের সহায়তা করেছেন, কর্মকর্তাদের অনেকেই নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং সরকারের প্রতিপক্ষদের হয়রানীর কাজে ব্যবহৃত হয়েছেন। দুদকের ভিতরেই দুর্নীতি ও রাজনীতি প্রবেশ করেছে মর্মেও প্রকাশ্যে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের শ্বেতপত্র থেকে সেই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। দুদকের মামলায় দন্ডিত বিএনপি, জামাত, অন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ড.মুহাম্মদ ইউনুসের মত আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালত কর্তৃক, উচ্চ আদালত কর্তক খারিজ হয়ে আসামীরা বেকসুর খালাস পাচ্ছেন। এতে কি প্রমাণিত হয় না যে দুদককে পতিত সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে এবং দুদকের কর্মকর্তারাও বেআইনীভাবে ব্যবহৃত হয়েছেন? দুদকের ডাইরেক্টর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্থ হয়ে আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়েছেন। কক্সবাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী শরীফ নামের বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কমিশন কর্তৃক যথাযথভাবে চাকুরীচ্যুৎ হয়ে হাইকোর্ট সুপ্রীমকোর্টে গিয়েও চাকুরী ফিরে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার সাথের মাহবুবর রহমান নামের উচ্চপদস্থ ডেপুটি ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন অভিযোগে কমিশনে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল বলে আমাদেরসময় পত্রিকায় প্রথম পৃষ্টায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। দুদকের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সকল সদস্য, দুদকের সকল পিপি অবশ্যই শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হবেন তা প্রত্যাশিত।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আমলে দুদক সংস্কারের জন্য জন্য কমিশন গঠিত হয়েছে। আইন অনুযায়ী কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাছাই কমিটিও গঠিত হয়েছে। দুদকের মধ্যে যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ আছে, প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা-কমীদের মত দলবদ্ধ হয়ে মিটিং-মিছিল, মানবন্ধন করে জনসমক্ষে নিজেদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন, সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাদের সংস্কার করা উচিত।

আপনার মন্তব্য দিন

প্রকাশিত মন্তব্য

কক্সবাজার


কলাম

পরিচালনা সম্পাদক: মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, বার্তা সম্পাদক: মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

© 2025 Dainik Coxsbazar, All Rights Reserved.